বন্যার শুরু
7
তখন প্রভু নোহকে বললেন, “তুমি যে একজন সৎ‌ মানুষ তা আমি লক্ষ্য করেছি| এমনকি এই যুগের দুষ্ট লোকদের মধ্যেও তুমি নিজেকে সৎ‌ রেখেছ| সুতরাং তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুমি গিয়ে নৌকোতে ওঠো| পৃথিবীর সমস্ত শুচি পশুপাখীর* সাত সাত জোড়া এবং অন্যান্য প্রত্যেক পশুর এক এক জোড়া নাও| এই সমস্ত পশুপাখীদের তুমি ঐ নৌকোতে তোমার সঙ্গে নেবে| সমস্ত রকম পাখীর সাতটি করে জোড়া নেবে| এর ফলে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত পশুপাখী আমি ধ্বংস করে ফেলার পরেও এইসব পশুপাখী সম্পূর্ণভাবে বংশলোপের হাত থেকে রক্ষা পাবে| এখন থেকে ঠিক সাতদিন পরে আমি পৃথিবীতে প্রবল বর্ষণ ঘটাবো| 40 দিন 40 রাত ধরে বৃষ্টি হবে| আমি পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণী ধ্বংস করে দেব| যা কিছু আমি সৃষ্টি করেছি, সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে|” প্রভু যা যা করতে বললেন, নোহ সে সমস্তই করলেন|
যখন সেই বর্ষন শুরু হল তখন নোহের বয়স 600 বছর| নোহ এবং তাঁর পরিবার মহাপ্লাবন থেকে পরিত্রাণের জন্যে নৌকোতে প্রবেশ করলেন| নোহের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, তাঁর পুত্ররা ও পুত্রবধূরা সবাই নৌকোতে ছিলেন| সমস্ত শুচি ও অশুচি পশুপাখী এবং মাটিতে যারা বুকে হেঁটে চলে সেইসব প্রাণী নোহের সঙ্গে নৌকোতে গিয়ে উঠল| ঈশ্বর যেমনটি আদেশ করেছিলেন ঠিক তেমনভাবে স্ত্রী ও পুরুষে জুটি বেঁধে সমস্ত পশুপাখী নৌকোতে চড়লে, 10 সাত দিন পরে শুরু হল প্লাবন| পৃথিবীতে শুরু হলো বর্ষা|
11-13 নোহর 600তম বছরের দ্বিতীয় মাসের 17তম দিনে সমস্ত ভূগর্ভস্থ প্রস্রবণ ফেটে বেরিয়ে এল, মাটি থেকে জল বইতে শুরু করল| ঐদিন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল, বাঁধ ভেঙে গেল এবং সমস্ত পৃথিবী জলপ্লাবিত হলো| সেই একই দিনে প্রচণ্ড বেগে বৃষ্টিপাত শুরু হল যেন আকাশের সমস্ত জানালা খুলে গেল| 40 দিন 40 রাত ধরে সমানে বৃষ্টি হলো| সেই দিনটিতেই নোহ ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন পুত্র শেম, হাম, যেফৎ আর তাদের তিন স্ত্রী সকলেই নৌকোয় প্রবেশ করল| 14 ঐ সব মানুষ আর পৃথিবীর যাবতীয় পশুপাখী নৌকোর মধ্যে আশ্রয় নিলো| সব রকমের গৃহপালিত জন্তু এবং পৃথিবীতে যতরকমের পশুপাখী চলে ফিরে আর উড়ে বেড়ায় সবাই নৌকোর ভেতরে নিরাপদে থাকলো| 15 সমস্ত জন্তু জানোয়ার, পাখী ইত্যাদি নোহর সঙ্গে নৌকোতে উঠলো। প্রাণবায়ু বিশিষ্ট সমস্ত পশুপাখী নৌকাতে জোড়ায়় জোড়ায়় থাকল| 16 ঈশ্বর যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, নোহ সেই অনুসারে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর এক এক জোড়া নৌকোতে তুললে, প্রভু বাইরে থেকে নৌকোর দরজা বন্ধ করে দিলেন|
17 পৃথিবীতে 40 দিন ধরে বন্যা চলল| জলের মাত্রা ক্রমশঃ উঁচু হতে লাগল আর সেই নৌকো মাটি ছেড়ে জলের উপরে ভাসতে থাকলো| 18 জল বাড়তেই থাকল আর নৌকো মাটি ছেড়ে অনেক উঁচুতে ভাসতে লাগল| 19 জল এত বাড়লো যে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো পর্যন্ত ডুবে গেল| 20 পর্বতগুলোর মাথা ছাপিয়ে জল বাড়তে লাগল| সবচেয়ে উঁচু পর্বতের উপরেও 20 ফুটের বেশী জল দাঁড়াল|
21-22 পৃথিবীর সমস্ত জীব মারা গেল| প্রতিটি পুরুষ ও স্ত্রী এবং পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার মারা পড়ল| সমস্ত বন্য প্রাণী, সরীসৃপ ধ্বংস হয়ে গেল| স্থলচর যত প্রাণী শ্বাস প্রশ্বাস নেয় তারাও মারা গেল| 23 এইভাবে ঈশ্বর পৃথিবীকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেললেন| পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত অস্তিত্ব ধ্বংস করে ফেললেন| সমস্ত মানুষ, সমস্ত জন্তু জানোয়ার, বুকে হাঁটা সমস্ত প্রাণী এবং সমস্ত পাখী এই সব কিছুই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল| নোহ আর নোহের পরিবার পরিজন এবং নৌকোতে আশ্রয় পাওয়া পশুপাখী–কেবলমাত্র এইসব প্রাণের অবশেষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকলো| 24 একটানা 150 দিন পৃথিবী বিপুল জলরাশিতে ডুবে থাকলো|
* 7:2 শুচি পশুপাখীর পাখীরা এবং পশুরা যারা বলির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলে ঈশ্বর বলেছিলেন|