ভবিষ্যতে মন্দিরের বিনাশ
(মথি 24:1-44; লূক 21:5-33)
13
1 যীশু যখন মন্দির ছেড়ে যাচ্ছেন, সেই সময় শিষ্যদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হে গুরু, দেখুন কত চমৎকার বিশাল বিশাল পাথর ও কত সুন্দর দালান৷”
2 তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি এইসব বড় বড় দালান দেখছ? এর একটাও পাথর আর একটা পাথরের ওপরে থাকবে না; সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে৷”
3 পরে তিনি মন্দিরের সামনে জৈতুন পর্বতমালায় বসলে, পিতর, যাকোব, যোহন এবং আন্দ্রিয় তাঁকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
4 “আমাদের বলুন দেখি, এই সমস্ত ঘটনা কখন ঘটবে? আর কি চিহ্ন দেখেই বা বুঝতে পারব যে এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে চলেছে?”
5 তখন যীশু তাঁদের বলতে লাগলেন, “সতর্ক থেকো, কেউ যেন তোমাদের না ভোলায়৷
6 সেদিন অনেকে আমার নাম নিয়ে আসবে এবং বলবে, ‘আমিই তিনি’ এবং তারা আরও অনেকের মন ভোলাবে৷
7 কিন্তু তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনবে, তখন অস্থির হয়ো না; এটা ঘটবেই, কিন্তু তখনও শেষ নয়৷
8 কারণ জাতির বিরুদ্ধে জাতি এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য জেগে উঠবে৷ স্থানে স্থানে ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ হবে৷ এসব কেবল জন্ম যন্ত্রণার আরম্ভ মাত্র৷
9 “তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান! লোকে তোমাদের আদালতে হাজির করবে এবং সমাজগৃহের মধ্যে তোমাদের ধরে মারবে৷ আমার জন্য তোমরা দেশের শাসনকর্তা ও রাজাদের কাছে সাক্ষী দেবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াবে৷
10 আর সব কিছু শেষ হবার আগে সমস্ত জাতির কাছে সুসমাচার প্রচার করা হবে৷
11 কিন্তু লোকে যখন তোমাদের গ্রেপ্তার করে বিচার সভায় নিয়ে যাবে তখন তাদের সামনে কি বলবে তা আগে থেকে ভেবো না, বরং সেই সময়ে পবিত্র আত্মা যা বলতে বলবেন তাই বলবে৷ কারণ তোমরাই যে কথা বলবে তা নয়, পবিত্র আত্মাই তোমাদের মধ্যে দিয়ে কথা বলবেন৷
12 “তখন ভাই ভাইকে ও বাবা সন্তানকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেবে এবং সন্তানরা বাবা-মার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের হত্যার জন্য ধরিয়ে দেবে৷
13 আর আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে৷ কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সেই রক্ষা পাবে৷
14 “যখন তোমরা দেখবে, ‘ধ্বংসের সেই ঘৃণার বস্তু যেখানে দাঁড়াবার নয় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷’* পাঠকের বোঝা উচিত্ এর অর্থ কি, তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকে তারা পাহাড়ে পালিয়ে যাক৷
15 এবং কেউ যদি ছাদে থাকে, সে যেন বাড়ি থেকে কোন কিছু নেবার জন্য নীচে না নামে বা ঘরে না ঢোকে৷
16 কেউ যদি মাঠে থাকে, সে যেন জামাকাপড় নেবার জন্য ফিরে না যায়৷
17 “হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী বা যাদের কোলে শিশু থাকবে তাদের কত কষ্ট!
18 আর প্রার্থনা কর যেন এটা শীতকালে না ঘটে,
19 কারণ সেই সময় হবে বড়ই কষ্টের সময়৷ তেমনটি প্রথম যখন ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনই হয় নি আর কখনও হবেও না৷
20 আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে না দিতেন, তবে কোন প্রাণই রক্ষা পেত না৷ কিন্তু তিনি যাদের মনোনীত করেছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷
21 “কেউ যদি তখন তোমাদের বলে, ‘দেখ, খ্রীষ্ট এখানে বা ওখানে আছেন, তোমরা বিশ্বাস কোরো না৷
22 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা এবং ভাববাদীরা উঠবে এবং নানা চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করে দেখাবে, এমন কি সম্ভব হলে মনোনীত লোকদেরও ভোলাবে৷
23 কিন্তু তোমরা সাবধান থেকো৷ আমি তোমাদের আগেই সমস্ত কিছু বলে দিলাম৷
24 “কিন্তু সেই সময়, সেই কষ্টের শেষে,
‘সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে
এবং চাঁদ আর আলো দেবে না৷
25 আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে,
আকাশের সমস্ত শক্তি বিচলিত হবে৷’ যিশাইয় 13:10, 34:4
26 “তখন লোকেরা দেখবে, মানবপুত্র মহামহিমায় ও পরাক্রমের সঙ্গে মেঘরথে আসছেন৷
27 তখন মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আকাশের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারি বায়ু থেকে তাঁর মনোনীত লোকদের সংগ্রহ করবেন৷
28 “ডুমুর গাছ থেকে এই দৃষ্টান্ত শেখো; যখন তার শাখা-প্রশাখা কোমল হয়ে পাতা দেখা দেয়, তখন তোমরা জানতে পার গরম কাল এসে গেল৷
29 ঠিক তেমনি ঐ সমস্ত ঘটনা ঘটতে দেখলেই তোমরা বুঝতে পারবে যে সময়† খুব কাছে, এমনকি দরজার সামনে৷
30 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমস্ত ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এই প্রজন্মের শেষ হবে না৷
31 আকাশ এবং পৃথিবীর লোপ হবে, কিন্তু আমার কথা লোপ কখনও হবে না৷
32 “সেই দিনের বা সেই সময়ের কথা কেউ জানে না; স্বর্গদূতরাও নয়, মানবপুত্রও নয়, কেবলমাত্র পিতাই জানেন৷
33 সাবধান! তোমরা সতর্ক থেকো৷ কারণ কখন যে সেই সময় হবে তোমরা তা জানো না৷
34 “সেই দিনটা এমনভাবেই আসবে যেমন কোন লোক নিজের বাড়ি ছেড়ে বিদেশে বেড়াতে যায় এবং তার চাকরদের দায়িত্ব দিয়ে প্রত্যেকের কাজ ঠিক করে দেয় আর দ্বাররক্ষককে সজাগ থাকতে বলে৷
35 তাই তোমরা সতর্ক থাকবে, কারণ তোমরা জান না কখন বাড়ির মালিক আসবেন, সন্ধ্যাবেলায়, কি মাঝরাতে, কুকড়া ডাকের সময় কি ভোরবেলায়৷
36 হঠাৎ তিনি এসে যেন না দেখেন যে তোমরা ঘুমিয়ে রয়েছ৷
37 আমি তোমাদের যা বলছি, তা সবাইকে বলি, ‘সজাগ থেকো৷’”